একসময়ের দাপুটে খলনায়িকা সংঘমিত্রা ব্যানার্জির শেষ জীবন ছিল চোখে জল আনার মত, আজ জানবো তারই কথা

নিজস্ব প্রতিবেদন: বাংলা ছবির গ্ল্যামার কুইন খলনায়িকা বলা হয়ে থাকে তাকে।নিজের অভিনয় দিয়ে যেকোনো নেগেটিভ চরিত্রকে সহজেই তুলে ধরতেন তিনি। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬০ বছর বয়সে অকালেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন‌। শিরোনাম দেখে নিশ্চয়ই আপনারা বুঝে গিয়েছেন আমরা কার কথা বলছি। আমরা বলছি একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সংঘমিত্রা ব্যানার্জীর কথা।

১৯৫৬ সালের আগস্ট মাসে বেনারসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার পিতা ছিলেন সুভাষ কুমার মুখোপাধ্যায় এবং মাতা সান্তনা দেবী। পরবর্তী সময়ে কলকাতায় চলে আসে তার পরিবার। প্রথমে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে সংস্কৃত সাহিত্যে স্নাতক এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন এই নায়িকা।

পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি শিখেছিলেন শাস্ত্রীয় নৃত্য। থাঙ্কমনি কুটির থেকে শুরু করে বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের কাছে তিনি তালিম নিয়েছেন। জাপানের টোকিও থেকে ক্লাসিকাল ডান্স এর উপরেও ডিপ্লোমা করেছিলেন তিনি।

একটা সময়ে ভেবেছিলেন অধ্যাপিকা হবেন। কিন্তু নাচের সূত্র ধরেই বাংলা চলচ্চিত্র জগতে আগমন হয় তার। কোন রকমের যেমন তেমন ছবি নয় মহানায়ক উত্তম কুমারের ছবি । উত্তম কুমার তখন তার পরিচালিত ছবি কলঙ্কিনী কঙ্কাবতীর জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন। এখানেই অডিশন দিয়েছিলেন সংঘমিত্রা। একসাথেই সংঘমিত্রাকে পছন্দ হয়ে গেছিল উত্তম কুমারের।

সেই সময় দাঁড়িয়ে উত্তম কুমারের ছবিতে চান্স পাওয়াটা কিন্তু সোজা কথা ছিল না।। উত্তম কুমারের চোখে ধরা পড়ে সংঘমিত্রার উজ্জ্বল সম্ভাবনা। তাই মহানায়ক যথেষ্ট ভালোবাসতেন তাকে। এর পরেই দিলীপ রায় পরিচালিত অমৃতকুম্ভের সন্ধানে ছবিতে একটি রোলে অভিনয় করেন সংঘমিত্রা। তারপর ধীরে ধীরে টলিউডের একজন জাদরেল খলনায়িকা হিসেবে নাম উঠে আসে তার।

নেগেটিভ রোলে তার জুড়ি মেলা ভার। ছোট বউ থেকে শুরু করে লাঠি, চৌধুরী পরিবার প্রভৃতির সব ছবিতেই তিনি নিজের অভিনয় দক্ষতার কথা জানান দিয়েছিলেন। ছোট বউ ছবিটির জন্য গোল্ডেন ডিস্ক, সিলভার ডিস্ক, দিশারী পুরস্কার সহ উত্তম কুমার পুরস্কারে ভূষিত করা হয় তাকে। সিনেমায় আসার শুরুতেই এলাহাদাবাদের জয়ন্ত ব্যানার্জিকে বিয়ে করেছিলেন তিনি।

কর্মসূত্রে যেহেতু স্বামী বাইরে থাকতেন তাই একমাত্র ছেলে অনুরাগ ব্যানার্জিকে একা হাতেই মানুষ করেছিলেন অভিনেত্রী। জীবনের সকল কষ্ট যন্ত্রনা হাসিমুখেই জয় করেছেন তিনি।কখনোই কিন্তু তিনি কারোর সহানুভূতি প্রত্যাশা করেননি। এমনকি নিজের মারণ রোগের কথাও কিন্তু তিনি কাউকে বলেননি। কখনোই তিনি ইন্ডাস্ট্রি থেকে কোন আর্থিক সাহায্য চাননি।

অবশেষে ২০১৬ সালে ষাট বছর বয়সে দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জনপ্রিয় খলনায়িকা সংঘমিত্রা ব্যানার্জি। মৃত্যুর পর সমস্ত কাজ মিটে গেলে ইন্ডাস্ট্রিতে এই খবর জানান পুত্র অনুরাগ। তবে এই ঘটনায় আজও অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে কেন এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অভিনেত্রী?

ইন্ডাস্ট্রির প্রতি কি কোন চাপা অভিমান লুকিয়ে ছিল তার মনে! যদিও মৃত্যুর শেষ পর্যন্ত এরকম কিছুই জানা যায়নি। এই প্রতিবেদন দ্বারা অভিনেত্রী সংঘমিত্রা ব্যানার্জিকে জানাই অসংখ্য শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।

ভিডিওটি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন- https://youtu.be/iN5ASEDXrmI

Back to top button