জীবনের শেষ দিনগুলি কেমন কেটেছিল যাত্রালক্ষ্মী বীনা দাশগুপ্তর, জেনে নিন তার জীবনের অজানা কাহিনী









নিজস্ব প্রতিবেদন: কালের নিয়মে আমাদের চারপাশের পরিবেশ থেকে অনেক প্রতিভারাই কিন্তু হারিয়ে গিয়েছেন। আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনে আমরা তেমনই একজন মানুষের কথা বলবো যিনি যাত্রা লক্ষী খেতাব পেয়েছিলেন। এই মানুষটিকে এক ঝলক দেখার জন্য দীর্ঘ সময় ধরেও অপেক্ষা করতে প্রস্তুত ছিলেন ভক্তরা। নিশ্চয়ই শিরোনাম দেখে বুঝে গিয়েছেন আমরা বলছি যাত্রালক্ষী বীনা দাশগুপ্তের কথা।
আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা তাকে নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করে আপনাদের সামনে কিছু অজানা তথ্য তুলে ধরতে চলেছি। ১৯৫২ সালের বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা রমেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য পালাগান লিখতেন, গাইতেন এবং অভিনয় করতেন।তার কন্ঠের গান শুনে মানুষ চোখের জলে ভাসতো। বীণার গানের গলাও ছোট থেকেই ভালো ছিল।




মেয়ের প্রতিভা দেখে তাই ছোট থেকেই অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন তার বাবা। সংসারে চরম অভাব থাকায় লেখাপড়া খুব বেশি দূর চালাতে পারেননি তিনি। যখন ১৮ বছর বয়স তখন বাবার উদ্যোগেই যাত্রাতে অভিনয় করা শুরু করেছিলেন বীনা ভট্টাচার্য।অসাধারণ অভিনয় এবং সুন্দর গান গাওয়ার ক্ষমতা রাতারাতি জনপ্রিয় করে তুলেছিল তাকে।
একদিন তার এই জনপ্রিয়তা কলকাতাতেও এসে পৌঁছল ফলস্বরূপ তিনি হয়ে উঠলেন এখানকার একজন খ্যাতনামা অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন। একদিকে যাত্রার উত্তম কুমার নামে খ্যাত স্বপন কুমার এবং যাত্রালক্ষ্মী বীনা দাশগুপ্ত সব আসর মাত করে দিতেন। যাত্রা করতে করতেই তার আলাপ হয়েছিল অনুপ দাশগুপ্তের সঙ্গে। তিনি ছিলেন বাংলা যাত্রা মঞ্চের একজন নামজাদা শিল্পী।




অনুপ দাশগুপ্তের সঙ্গেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তিনি হয়ে ওঠেন বীনা ভট্টাচার্য থেকে দাশগুপ্ত।এরপর এই নামেই দীর্ঘ কয়েক দশক বাংলার যাত্রা মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছিলেন তিনি।১০৯ টি যাত্রাপালায় অভিনয় করেছেন তিনি। যার মধ্যে ওগো বিষ্ণুপ্রিয়া, ব্রজের বাঁশুরি, নটী বিনোদিনী, মা বিক্রির মামলা, অচল পয়সা ইত্যাদি রয়েছে। প্রথমদিকে নায়িকা হিসেবে বীনা দাশগুপ্ত যতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন পরবর্তীকালে চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবেও কিন্তু তিনি সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
যাত্রাপালার পাশাপাশি বেশ কিছু বাংলা ছবি আর টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে বীনা দেবীকে। তবে সব থেকে বেশি কিন্তু যাত্রাতেই স্বচ্ছন্দ ছিলেন তিনি।জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এটাকেই ধরে রেখেছিলেন। বর্ধমানের একটি গ্রামে 2005 সালের 4ই এপ্রিল জীবনের শেষ যাত্রায় অভিনয় করে ফেরার পথে একটি মাল বোঝাই লরির সঙ্গে তার গাড়ির ধাক্কা লাগে।




ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এই কিংবদন্তি শিল্পী। সময় তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৫২ বছর।তার অকাল মৃত্যু বাংলা যাত্রা শিল্পকে অনাথ করে দিয়েছিল। যা ক্ষতি হয়েছিল তা আজও কিন্তু পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে মনোরঞ্জনের অনেক উপকরণ এসে পড়ায় গ্রাম বাংলাতেও যাত্রার চাহিদা কমতে শুরু করেছে।
অথচ বাংলার এই প্রাচীন মনোরঞ্জনের মাধ্যম একটা সময় দর্শকদের অনাবিল আনন্দ দিয়ে এসেছে। আজ হয়তো বীণা দাশগুপ্ত বেঁচে থাকলে বাংলার যাত্রা শিল্প এতটা লক্ষীছাড়া হত না। আজকের এই প্রতিবেদন দ্বারা আমরা এই প্রবাদপ্রতীম শিল্পী কে জানাই অসীম শ্রদ্ধা।
ভিডিওটিঅদেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন- https://youtu.be/x6bGG3ssW0o











